রায়গঞ্জ: হাসপাতাল চত্বরের এক কোণে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এক গৃহবধূ। প্রায় দু’বছর ধরে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরের এক কোণেই অনাহারে-অর্ধ্বাহারে চলছে তাদের জীবন-যাপন। পরিবারের কেউ যোগাযোগ না রাখায় বাড়ি ফিরতে পারছে না তারা। সবুজ শৈশব হারিয়ে পরম অযত্নে বড় হয়ে উঠছে এই দুই শিশু।
রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের জন্য ব্যবহৃত করিডোরের এক কোণে আদুল গায়ে শুয়ে-বসে থাকে দুই শিশু। পাশে তাদের মা। আলুথালু বেশ, চোখ-মুখ ভাবলেশ হীন,কথাবার্তা অসংলগ্ন। হাসপাতাল চত্বরের দোকানদার বা আয়ামাসীদের বক্তব্য এই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন। বছর দুয়েক ধরে এই করিডোরের ঘুপচিতেই দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাস করেন। শীত,গ্রীষ্ম, বর্ষায় ছোট্ট শরীরে কাঁপুনি ধরায়, ভিজে চুপসে যায় খোলা শরীর।
কোভিড পরিস্থিতিতেও তাদের মুখে মাস্ক নেই, স্যানিটাইজারের নামটাও জানা নেই। এই অসহায় পরিস্থিতিতে নাপাওয়া জীবনেই বেড়ে উঠছে সবুজ শৈশব। হাসপাতালের চেনা পরিচিতদের সৌজন্যে দিনেরাতে কিছু খাবার জোটে এই যা। ঠিকমতো নিজের নাম না বলতে পারা দুই শিশুর মা বলেন,” বাড়ি কালিয়াগঞ্জে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে কেউ খোঁজ নেয় না। তাই এখানে এসেছি। ঠিকমতো খাবারো জোটে না।
অন্যদিকে হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী সংগঠনের নেতা প্রশান্ত মল্লিক বলেন,” নিয়ম অনুযায়ী দুই শিশু ও তার মাকে হাসপাতালের অন্য কোথাও রাখা সম্ভব নয়। তবে এদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিশুদুটিকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করবো। তবে এদের যাতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় সেজন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আবেদন করছি।”
অন্যদিকে হাসপাতালের এ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার অভীক মাইতি বলেন,”এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন কিছু করার নেই। তবে কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। অন্যথায় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।”