November 24, 2024
শিরোনাম

পুজোর আগেই কলকাতার রাস্তায় নামতে চলেছে হুড খোলা দোতলা বাস, উদ্বোধন করলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

কলকাতা: নতুন নীল-সাদা বাসে থাকছে সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা। থাকছে আগের চেয়ে বেশি চওড়া সিঁড়ি। বাসের মধ্যে থাকছে সিসি ক্যমেরা, প্যানিক বাটন।
শহরে ফের দোতলা বাস। শুধু লালের বদলে নীল-সাদা রঙের দোতলা বাসের দৌড় শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। ঠিক লন্ডনে যেমনটা দেখা যায়, তেমন এবার এই মহানগরেও দেখা যাবে। আজ মঙ্গলবার দোতলা বাসের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায় দোতলা বাস ফিরলেও তা দিয়ে প্রতিদিন যাত্রী পরিবহণ করা হবে না। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য সাধারণ যাত্রী পরিবহণের বদলে পর্যটনে প্রসার ঘটানো। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা খরচ করে দু’টি দোতলা বাস তৈরি করিয়েছে। বাস তৈরি করানো হয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা জামশেদপুরের ‘বেবকো বা বিবিকো’কে দিয়ে। বাসটি তৈরি হয়েছে ভারত স্টেজ-৪ গোত্রের। তবে স্টেজ বদলের জন্য নয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। আপাতত ৪৫ আসনের দু’টি দোতালা বাস তৈরি হয়েছে। ধাপে ধাপে মোট ১০ টি দোতলা বাস নিতে চায় রাজ্য পরিবহন দফতর। সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ রোড ট্রান্সপোর্ট-এর (সিআইআরটি) ছাড়পত্র পেয়েছে রাজ্য। এই ছাড়পত্র না মিললে অবশ্য বাস পথে নামানো যায় না। তবে কলকাতায় এই বাস আপাতত চালানো হবে শুধু সিটি ট্যুরের জন্যে।
দু’টি বাসই হুডখোলা বা  ছাদ খোলা থাকবে। বর্ষা বা গরমে ছাদে অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে নিগম-কর্তাদের কথা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ এক ধরণের শিট ব্যবহার করা যাবে। পরিবহণ দফতর  আবার দোতলা বাস চালাতে আগ্রহী। অনেকটা লন্ডনের সিটি ট্যুরের ধাঁচে শহরে পর্যটনের ক্ষেত্রে এই বাস ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছিল। এ বার এই বাস দিয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে বলে মনে করছেন দুই দফতরের আধিকারিকরা।
ইতিহাস বলছে, কলকাতার রাস্তায় প্রথম দোতলা বাস চলে ১৯২৬ সালে। পরিবহণের জন্য স্বাধীনতার পর সিএসটিসি নামের সংস্থা তৈরি হয়। তারাই কলকাতার রাস্তায় দোতলা বাস নামায়। ১৯৯০ থেকে এই বাসের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। একটা সময় ব্যরাকপুর, হাওড়া, বেহালা থেকে চলাচল করত এই দোতলা বাস। কিন্তু নানা সমস্যার জন্য ২০০৫-এ দোতলা বাসের রাস্তায় চলা বন্ধ হয়। এখন স্মারক হিসেবে একটি দোতলা বাস রাখা রয়েছে নিউটাউনের ইকো পার্কে। তবে সেই বাসের রং বদলে ফেলা হয়েছে। লাল থেকে নীল-সাদা হয়েছে। ডিসেম্বর, জানুয়ারী মাসে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজারহাট, নিউটাউনে চালানো হবে এই বাস।
নতুন নীল-সাদা বাসে থাকছে সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা। থাকছে আগের চেয়ে বেশি চওড়া সিঁড়ি। তবে যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তা বাসের ভেতরে করা হয়েছে। বাসের মধ্যে থাকছে সিসি ক্যমেরা, প্যানিক বাটন। আসন আগের চেয়ে অনেক বেশি আরামদায়ক। দোতলা অংশ ঘিরে রাখা আছে স্বচ্ছ ফাইবার গ্লাস দিয়ে। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “কলকাতার যীশু” কবিতায় দোতলা বাসের গল্প আছে। এছাড়া একাধিক সিনেমাতেও কলকাতার নস্ট্যালজিক এই দোতলা বাসের নানা গল্প রয়েছে। সেই পুরনো স্মৃতি আবারও এই নতুন বাসের হাত ধরে ফিরবে বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। পরিবহণ দফতর আশাবাদী শীঘ্রই কেন্দ্রের অনুমতি পেয়ে যাবে রাজ্য, এই বাস আরও বেশি সংখ্যায় পথে নামানোর জন্য।

error: Content is protected !!